ইশতিয়াক
একজন গল্পকার
বসে বসে বই পড়ে আর ভাবে।
মাথায় সব সময় গল্প নিয়ে ঘুরে, গল্প লিখে।
দেখা যায় সে যাকে নিয়ে গল্প লিখে তার উন্নতি হয়।
একবার দেখা গেলো এক ভ্যান চালকের দু:খ দেখে, তার সাথে কথা বলে তাকে জানায় তার দু:খ কষ্ট নিয়ে গল্প লিখবে । ভ্যান চালক শুনে খুশী হয়, কেউ একজন হলেও আছে যে তার দু:খ বুঝে। গল্প লিখার কয়েককাল পর ভ্যান চালকের সাথে এক বড়সড় রেস্তোরায় লেখক ইশতিয়াক'র দেখা। ভ্যান চালকের গেটআপ চেহারার মধ্যে আধুনিকতার ছাপ থাকলেও তাকে চিনতে অসুবিধা হয় নি লেখকের। কত কয়েক বছরে একজন ভ্যান চালকের বাহিক্য কাঠামোর এতোটাই পরিবর্তন ঘটেছে যে তাকে দেখে যে কারোই ভূত দেখার মতো অবস্থা হতে পারে, তার উপর শহুরের এই এলাকায় গড়ে উঠা আভিজাত্যে ঢাকা এক অভিজাত রেস্তোরায় বসে আছে সে। লেখক অবাক চেহারায় রেস্তোরায় প্রবেশ করে তাকে দেখে, ভ্যানওয়ালাও আগ বাড়িয়ে তার সামনে চলে আসে; কাছে আসতেই একটু মৃদু হাসে, ছোট করে একটা সালাম দেয়। এসময় লেখক কিছু বলতে যাবে তার আগেই ভ্যানচালক বলে, আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন এই জন্যে নিজের প্রতি গর্ববোধ হচ্ছে। আপনার মতো বড়মাপের লেখক দু পয়সার ভ্যান চালককে এখনো মনে রেখেছেন এর চেয়ে বড় কিছু আর কি হতে পারে। আল্লাহ্র কৃপায় আমার অনেক ধন দৌলত হয়েছে কিন্তু আল্লাহ্ সবাইকে একসাথে সব কিছুর ক্ষমতা দেয় না, আমার অনেক অর্থ থাকতে পারে কিন্তু আমার মধ্যে শিক্ষা নেই, শিক্ষা বিনা অর্থ যে মরিচিকা তা আমি প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তেই অনুভূব করি। লোকটি একনাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছে কথাগুলো শুনে লেখক একটুও বিস্মিত হচ্ছে না, এক পলকে লোকটির মনের অবস্থা অনুমান করে নিয়েছে। গত কয়েক বছরে লোকটির আর্থিক অবস্থার সাথে সাথে বেশ কিছু চারিত্রিক পরিবর্তনও ঘটেছে। গরিব অবস্থায় লোকটি পাচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো, জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় থেকেও আল্লাহ্ কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতো, জীবন নিয়ে নিজের মধ্যে কোন অভিযোগ ছিলো না। বর্তমানে তার এই গুণ গুলো নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে অনেক দোষও তৈরি হয়েছে, অর্থের মাপকাঠি অনুযায়ী চলতে গিয়ে সমাজের কতো উঁচু তলার মানুষের সাথে তার পরিচয়, সমাজে নিজেকে উঁচু তলার মানুষ বুঝানোর জন্যে গায়ে চরাল চড়া দামে কিনা শার্ট-প্যান্ট, টাই-কোট, আগে যেখানে আল্লাহ্র কাছে নিজেকে জাহির করার জন্যে মসজিদে যাওয়া হতো দিনে তিন-চার বার আর এখন উঁচু তলায় নিজেকে জাহির করার জন্যে সময় বের করে সবসময় বারে পরে থাকে। সারাদিন নিজের তৈরি মনগড়া কৃত্রিম দু:খে মশগুল থাকে। দু:খ ভুলবার জন্যে মদ আর নারীকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। অথচ গরীর থাকা অবস্থায় নিজের বৌকে নিয়ে কতোই না সুখে ছিলো, অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে বৌ'ও গত হয়েছে। সে যে তখন বাপের বাড়ি গত হয়েছে তাকে আর ফেরানোর কোন চেষ্টাই করা হয় নি, বৌ ছিলো বড় অভিমানী স্বামীর আচরণে এতোই কষ্ট পেয়েছে যে বাপের বাড়িতেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
লেখক হিসেবে ইশতিয়াকের আলাদা দায়িত্ব আছে, যে ভ্যান চালকের জীবিকার চাকা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যে তার একটা গল্প লেখা সে চালকের যে জীবনের চাকা ঘুরে দাঁড়াবে সে বা কে জানতো। লেখক নিজেকে নিয়ে আবার ভাবনায় উদয় হলো, এতো অর্থবিত্তে থেকেও যে একজন ভ্যান চালক সুখে নেই সে জন্যে লেখক পুন:রায় সিদ্ধান্ত নিলো লোকটিকে নিয়ে দ্বিতীয় কিস্তির গল্পে লিখবে, যে গল্পের মোত্তাকথা হবে একজন ভ্যানচালকের সাদামাটা জীবন যে জীবনে অভাব আছে, আছে আত্মমর্যাদা, সৃষ্টিকর্তাকে ভয় পাওয়ারও ইঙ্গিত থাকবে, থাকবে শত কষ্টের মাঝেও একমুঠো সুখ।
যে জীবনে একবার চরিত্রের পতন ঘটে সে জীবনে পুনরায় কি চরিত্রের উন্নায়ন ঘটানো যায়? এক্ষেত্রে লেখক ভ্যান চালকের দ্বিতীয় কিস্তির গল্প লিখলেও তার গল্পের বাস্তবতা ঘটতে ব্যর্থ হয়। বাস্তবে দেখা যায় ভ্যান চালক ঠিকই অনেক কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করছে কিন্তু দিন শেষে নিজের উপার্জিত টাকা দিয়ে অন্ন কিনতে না গিয়ে মহল্লায় সস্তায় পাওয়া যায় এমন মদের দোকান খুঁজছে, বেশ্যাপাড়ায় অল্প দামে পাওয়া পতিতাদের নিয়ে ফূর্তিতে মেতে উঠছে আর নেশার ঘোর বেড়ে যেতেই আবোলতাবোল বলে বেড়াচ্ছে, স্রষ্টা আমাকে নিয়ে জুয়া খেলছে, কেনো বা এতো টাকা দিলো কেন বা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিলো!
No comments:
Post a Comment