উই
আমার নাম, জন্মসূত্রে ঢাকাইয়া হলেও পূর্বনিবাস বিক্রামপুরে। আমার দাদার দাদা তারও দাদার দাদা একদিন হুট করে কাউকে না বলে এক মিষ্টিঅলার হাত ধরে ঢাকায় পাড়ি জমায়। যদিও সে পিতামহ জানতেন না আসলে তিনি কোথায় যাচ্ছেন পরে অবশ্য এখানে মানুষের মুখে শুনে-বুঝে জানতে পারলেন তিনি বড্ড একটি শহরে- খুব উঁচু একটি দালানে আছেন। কুয়ো ঘরে বেড়ে উঠা ছোট পৃথিবী থেকে উঠে আশা সে বিস্ময় পুরুষের জানা ছিলো না পৃথিবীর আয়তন তার দেখা পৃথিবী থেকেও বিশালাকার। নতুন শহরে এসে তার কাছে সব কিছুই নতুন ঠেকছে। থাকার জন্যে দামী দামী জিনিষে নিজেকে মানিয়ে নিতে কিছু সময়ও লেগেছিলো তাঁর। ভদ্র পুরুষটির অভিজ্ঞতার আলোকে এখানের প্রতিটা আসবাবপত্রও তার কাছে নতুন লাগছে। খাদ্যাভাসের স্বাদেরও রয়েছে নতুনত্ব। এখানে এসে তাঁর প্রথন মনে হলো, গ্রামের চাষাভূষা আর শহুরে মানুষে কিছু পার্থক্য রয়েছে যা বহুকাল থেকে এই দু শ্রেনীকে পার্থক্যের আড়ালে বিভক্ত করে রেখেছে।
এতক্ষণে মাথায় উঁকিঝুঁকি ঘটতে পারে এই কিচ্ছা কাহিনীর ইতিহাস নিয়ে, কিভাবে এতো পুরানো কিচ্ছা আমার জানা। উঁকিঝুঁকি না আসলেও ব্যাপারগুলো জেনে রাখা ভালো, পরিবারের এই কিচ্ছা গুলো একটা রিচুয়াল পর্যায়ে ঠেকেছে। যার দ্বারা এই শহরে আমাদের গোড়াপত্তন তাঁর কাছ থেকে কিচ্ছা গুলো পরবর্তীতে তার নাতি নাতনি জেনেছে, এভাবে এক নাতি নাতনি থেকে অন্য নাতি নাতনিতে চলে এসেছে, যুগে যুগে চলে আশা কিচ্ছা গুলো আমরাও অন্যসব বংশধরদের মতো শুনে এসেছি। অতীতের আর সবার মতো আমরাও কিচ্ছাগুলো শুনে শিউরে উঠেছি। সাধারণত এরকম কাজে প্রচুর সাহসিকতার প্রয়োজন পড়ে। কিচ্ছা গুলো আমাদের কাছ থেকে শুনে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও বড় হবে। তাদেরও শিউরে উঠার অনুভূতি হবে, শুনার পর পূর্বপুরুষসে ভক্তি আর শ্রদ্ধাবোধে মাথায় তুলে রাখাতেও কার্পণ্যবোধ আসবে তাতে। এই সাহসী কাজের জন্যে তাদের মধ্যেও গর্ববোধ হবে যেমনটি এখন নিজের মধ্যেও হচ্ছে। পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলোও এমন গর্ববোধ নিজেদের মনে পুষে রাখতেন বলে মনে হচ্ছে।
‘উই’ নামটা নিয়ে কারো কারো প্রশ্ন বা জানার ইচ্ছেও থাকতে পারে, সাথে বয়সটাও। আবার এমনও হতে পারে নামটাকে সামান্য ব্যাপার ভেবে কেউ বা নিজের মধ্যে ইচ্ছেটাকে জাগতেও দিতে চাইবেন না। তবে সত্যি বলতে আমার নামের অর্থ কি, তা আমি দূরের কথা আমার বাবাও হয়তো এখনো জেনে উঠতে পারেননি। ভাসা ভাসা ভাবে জেনেছি আমাদের জাতের সাথে মিল রেখেই আমার নাম রাখা হয়েছে তখন। বহুবার ইচ্ছে হয়েছে অবশ্য এখনোও হচ্ছে বাবা মাকে জিজ্ঞেস করি- ‘উই’নামের মাজেজা কি কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারি নি, পারছিও না। প্রশ্ন করতে যাওয়ার আগেই নিজের মধ্যে এক প্রকার আড়ষ্টতা কাজ করে। যৌবনে ছেলে মেয়েদের মধ্যে এমন এক ধরণের আড়ষ্টতা কাজ করে যা তাকে কারো সাথে কথা বলতেও ইতস্ততায় ভুগায়। নিজের মধ্যে এমন কিছুই দেখা দিয়েছে কিনা তা বুঝা বা জানার চেষ্টাও করি নি কখনো।
আমাদের এই বিশাল তিন বেডের বাসায় আমরা মাত্র চারজন প্রানী। বাবা, মা, ছোট বোন ইকু আর আমি। অন্যান্য প্রানীর মতো আমাদেরও পড়ার বিশেষ একটা পদ্ধতি রয়েছে। আমাদের পদ্ধতিটা অবশ্য একটু অন্যরকম। এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না বরং এখন পরিবারের কথা বলতে মন চাচ্ছে-
ইডেক হলেন আমার বাবা। তাঁকে আমি আমার আইডল হিসেবে জানি। মানুষ সম্পর্কে তার কতো তত্ত্ব-জ্ঞান, বাবার কাছ থেকেই শিখেছি কিভাবে মানুষের সাথে ডিল করতে হয়। কিভাবে একটা মানুষকে বিরক্ত না করে তার কাছ থেকে প্রাপ্যটা আদায় করে নিতে হয়। বাঁচার জন্যেও জগতে বহু তত্ত্ব শিখতে হয়। তত্ত্বগুলো সব মৌখিক আর ব্যবহারিক, লিখিত তত্ত্বে এখানে অনীহা রয়েছে। এক রীতিতেই সবাই এখানে শিক্ষা নিয়েছে। বাবা তার বাবার কাছ থেকে, বাবার বাবা মানে আমার দাদা তাঁরও বাবার কাছ থেকে শিখে নিয়েছে। মৌখিক আর ব্যবহারিক তত্ব ছাড়া এখনে অন্য কোন তত্ব নেই; আমাদের স্বরণশক্তিও খুব তীক্ষ্ণ তাই সহজে কোন কিছু ভুলারও নয়।
আমার মায়ের মধ্যে বাবার মতো অতো গুন নেই। বাবা তাঁকে বোকা বললেও তাঁর মধ্যে বেঁচে থাকার নিজস্ব কিছু কৌশল রয়েছে যা বাবাও আজ পর্যন্ত আয়ত্ম করতে পারেন নি। জগতে বাঁচার জন্যে অনেক বুদ্ধিমান বা চালাক হওয়ার প্রয়োজন নেই, তা আমার মা ফিরেক্স’কে দেখলেই অনুধাবন করা যায়। ইকু অবশ্য মায়ের মতো হয় নি মোটেও বরং বয়সে ছোট হলেও তার মধ্যে রয়েছে নানারকম চালাকি কৌশল যা দিয়ে সে সহসায় যে কাউকে গায়েল করে দিতে পারে।
পূর্বপুরুষদের সুবিধা আর নিরাপত্তার কথা ভেবে বারে বারে এই শহরে থাকার স্থান পরিবর্তিত হয়েছে বংশধরদের মধ্যে। সর্বশেষ আমরা যে বাড়িতে এখন উঠেছি তার নাম ‘ফিলিকা গার্ডেন’। বাড়ির সম্মুখভাগ ঢুকতেই প্রাচীরের গায়ে চীনা মাটির খোদাই করা বড় বড় অক্ষরে লেখা বাড়ির নামটি। প্রথম দর্শনে যে কারো চোখে পড়বে চীনা মাটিতে লেখা বড় বড় অক্ষরগুলো। ঠিক আজ থেকে দশদিন আগে আমরা উঠেছি ‘ফিলিকা গার্ডেন’ এ। হুট করে একদিন দাদা-দাদীর মর্মহত দুর্ঘটনার পর বাবা দুঃখে কষ্টে আগের বাড়িটা ছাড়তে বাধ্য করেন বাড়ির সবাইকে। ওই বাড়িতে বহু আগ থেকেই আমাদের থাকা, দাদার কৈশোরে ওই বাড়িতে তার বাবা মায়ের হাত ধরে উঠেছেন। তারপর থেকে দশদিন আগ অবদি আমাদের ওখানে থাকা। কতো স্মৃতিই না ওই বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে জড়ো হয়ে আছে। সুঃখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সব মিলিয়ে জীবন খুবই অদ্ভুত। ক্ষুদ্র এই জীবনে কতো কিছুর সাথেই না মোকাবেলা করতে হয়-
স্মৃতি কখনো মনে করতে নেই, তাতে এক ধরণের ছাপা কষ্ট অনুভূত হয় একটু বাতাসেও কষ্টগুলো হু হু করে কেঁদে উঠে।
আমাদের নতুন এই বিশাল বাড়িতে আরেক পরিবারও থাকে, মজার বিষয় হলো আমাদের মতো মিলিয়ে দেখলে তারাও সংখ্যায় চার। এই অল্প কয়দিনে ওই পরিবারের প্রতি আমাদের আস্থা গড়ে উঠেছে। এতো নিরিহ আর নিরিবিল ভদ্র পরিবার আমি আগে কখনো দেখি নি। অত্র পরিবারের কর্তা কি করেন তা আমার জানা নেই। তাঁকে সাপ্তায়ে ছয়দিন ঘুম থেকে উঠে অফিসে ছুটতে দেখি। নিশ্চয়ই বড়সড় কোন অফিসের উদ্ধতন কর্তা হবেন আচার আচরণ,অর্থ- প্রাচুর্য দেখে তাই অনুমেয়।
প্রথম দেখাতেই বাড়ির ভদ্র মহিলাকে যে কারো অলস স্বভাবের মনে হতে পারে, প্রকৃত অর্থে সে এমনই। সারাদিন বাসায় বসে ঝিমায় আর টিভি দেখে অবশ্য অন্যকোন উপায়ও নেই। সংসারে কাজ করার জন্যেও কিছু থাকে না। দু-বেলা আয়া-বুয়া এসে সবকিছু করে রেখে যায়। আমাদের ছোটটা মাঝে মাঝে এই ভদ্র মহিলাকে জ্বালাতন করতেও ভুলে না। ঝিমাতে থাকা অবস্থায় ইকু তার গাঁ ঘেঁসে তাকে ছোট একটা কামর দেয় এতে মহিলা আচমকা চমকিয়ে উঠেন। দেখে নিজের হাসি চেপে রাখতে কষ্ট হয়। মহিলার করুণ মুখখানা দেখে তখন অবশ্য হুট করে মায়া জাগে নিজের মধ্যে। নিখাত ভদ্র দেখেই কিছু বলেন না মহিলা নাহলে ইকুর বাচ্চামি গুলো মেনে নেয়ার মতো ছিলো না।
এই পরিবারে যে দুই-বাচ্চা রয়েছে তার মধ্যে ছোট বাচ্চাটা ক্লাস সিক্সে পড়ে তার নাম রোমেন তাকেও হস্তনস্ত করতে ইকু ভুলে না। অন্য যে বাচ্চাটি রয়েছে তাকে অবশ্য বাচ্চা বললে ভুল হবে। আদর ভালোবাসা আর বড় সন্তান বলে পরিবারের কাছে সে বাচ্চা হতে পারে আদতে সে বাচ্চা নয়। তার নামেই এই বাড়ির নামকরণ করা হয়েছে। ফিলিকা- সে ক্লাস নাইনে পড়ে। এ বয়সে অন্য সব মেয়ে-ছেলের মতো তারও যৌবনের শুরুটা হয়েছে। আঁকা বাঁকা করে চলা, চলনা নিয়ে কথা বলা, কোন ছেলেকে দেখলে বার বার আড় চোখে তাকানো, চেহারায় বিশেষ লাবণ্য ভাব ফুটে ওঠা আর বাতাবী লেবুর মতো ছোট ছোট স্তন গুলোর জেগে ওঠা সব মিলিয়ে যৌবনের শুধুর লক্ষণ গুলো তার মধ্যে রয়েছে।
ইডেক ছোট বেলায় তার ছেলে মেয়েকে কিছু বিধি নিষেধ শিখিয়েছে যা জীবন যুদ্ধে চলতে গেলে সবার মান্য করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। তাঁর সব কিছু এখনো তীক্ষ্ণভাবে সঞ্চালন করে রেখেছে উই কিন্তু তারপরেও তারমধ্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। বাবার বিধি নিষেধ গুলো এমন ছিলো, ‘মেয়ে-ছেলের ব্যক্তিগত স্থান গুলোর দিকে তাকাতে নেই, সে গুলো স্পর্শ করা বা তাতে কামড় বসানো খুবই জগন্যতম কাজ। কাজগুলো থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। এখানে আশার পর গত তিন-চার দিন থেকে বাবার কথায় অনড় থাকতে পারছে না উই। সামনে পারবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্ধিহান দেখা দিয়েছে তার মধ্যে। এই স্থানে আশার আগে ইউ কখনো তার বয়সী রূপবতী-সুন্দরী মেয়ে দেখে নি, দেখলেও বা ওভাবে কখনো চোখ মেলে তাখানোর ইচ্ছে জাগে নি। ইতিমধ্যে একটা কারনে উই’র মনে হিম বাতাস বয়ে যাচ্ছে যে বাতাস শুধু মাত্র রক্তস্রোত দ্বারাই বন্ধ হতে পারে। হিম বাতাস বয়ে যাওয়া কারণটা নিয়ে উইয়ের মনে নানা চিন্তা। একা একা ভেবে কোন কিছুর কূল কিনারা পাচ্ছে না সে, তাদের দুজনের বয়স ই প্রায় কাছাকাছি অথচ দু’জন দু মেরুতে বাস করছে। হিসেব করলেও দেখা যাবে দু’জন একই ক্লাসে পড়ছে কিন্তু দুজনের পড়ালেখার ধরণেও কতো ভিন্নতা। পড়ার জন্যে ফিলিকাকে কতো কাঠামোর মধ্য দিয়েই না যেতে হয় কিন্তু উই বেচারা, তার কাজ হচ্ছে বাবার কাছ থেকে আর পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বশিক্ষিত হয়ে বেঁচে থাকা। শরীরের লেনদেনেও দুজনে কতো পার্থক্য-এই বয়সে ফিলিকা চায় তার ক্লাস টেন’এ পড়া লিকলিকে শুকনা গড়নের ছেলে বন্ধুটিকে কাছে পেতে। যার শরীরের উষ্ণতায় সে নিজেকে অন্যজগতে খুঁজে পেতে চায় আর একই সময়ে উই চায় টগবগে তরুণীর চঞ্চলা দেহের রক্তের ঘ্রাণ।
গত দু’দিন আগে উই কি দেখেছে যার জন্যে তার মধ্যে শান্ত ভাবখানা নিমিষেই দুমড়ে মুছরে ভেঙ্গে যাচ্ছে! যে কখনো বাবার কথায় অবাধ্য হয় নি সে কিনা উষ্ণ রক্তের খেলায় মেতে উঠেছে। যেদিনের ঘটনা নিয়ে তার মনে নানা রকম উঁকি ঝুঁকি সেদিন বিকেলে কোন এক বিশেষ কারনে উই’কে বাড়ির ছাদে উঠতে হয়েছে। তখন ফিলিকা আর লিকলিকে গড়নের একটা ছেলেকে ছাঁদে দেখে। যাদের ভাবখানা দেখে লজ্জায় সরে আসতে চাইছিলো কিন্তু নিজের মধ্য থেকে কি যেনো তাকে আড়ষ্ট করে রেখেছে থেকে যাওয়ার জন্যে। উই’র পুরো শরীর জুড়ে রক্তের খুদার জোয়ার বইতে লাগে তখন, নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট কষ্ট করতে হয়েছে কোন ভাবেই ভেতরের রাক্ষুসে ভাবটা যেতে চাচ্ছিলো না। অনেক কষ্টে নিজেকে দমিয়ে বাসায় যেতে উদ্যত হয় উই।
আজকে সারাদিন বাসায় বসে বসে সময় কাটতে চাচ্ছে না উই’র। এমন অবস্থায় ইডেক ছেলেকে কোন এক কাজে বাড়ির পাশে বাগানে যেতে বলেন। বাবার অনুমতি পেয়ে ছেলেও হন হন করে বাগানে ছুটে যাচ্ছে। হুট করে ফিলিকাকে বাগানের মঝখানে দেখে সে থমকে দাঁড়ায়। তার পাশে একটা ছেলেও ছিলো তাকে সে আগেও দেখেছে। ছেলেটির নাম- রিব্বিন। মাত্রই উই খুব স্পষ্ট ভাবে শুনতে ও জানতে পেয়েছে নামটা-
‘রিব্বিন বাবাই আস্তে চাপ দাও আমি খুব ব্যাথা পাচ্ছি’।
ফিলিকার মুখে একথা শুনে ঘেন্নায় উই এর গাঁ জ্বলে উঠলো তারপরেও তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ কারবার গুলো দেখে যাচ্ছে। এমন ভাবে সে দেখছে যেনো কোথাও লুকানোর প্রয়োজনবোধ টুকুও করলো না। বেশরমের মতো উই দেখে যাচ্ছে রিব্বিন চুমু খাচ্ছে ফিলিকের। দুজনের স্পর্শে দু ঠোট থেকে শুরু করে গাল অবদি তাদের রক্তের শিরা গুলো ভেসে উঠতে চাইছে। এই অবস্থায় উই নিজেকে আর মানুষ বলে দমিয়ে রাখতে পারছে না। আজ প্রথম সে তার বাবার কোন যুক্তিকে অর্থহীন বলে উড়িয়ে দিলো।
ইডেক সব সময় ছেলেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখিয়েছে এবং নিজেদের সে মানুষ বলেও দাবী করেন কিন্তু উই কখনো বাবার সাথে তর্কে যায় নি। তার নিজের কাছে নিজেদেরকে পরজীবীই মনে হয়। তাদেরকে তো সবসময় অন্যের দয়ার উপর বেঁচে থাকতে হয়। অবশ্য এ বেঁচে থাকাকে অন্যের দয়া বললেও ভুল হবে বরং অন্যের সরলতাকে পুঁজি করে তাদেরকে বেঁচে থাকতে হয়। টগবগে তাজা রক্ত দেখে উই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে নি। তড়িঘড়ি করে সে ফিলিকার গায়ে উঠে যায়। নরম দেহে স্তন, গাল আর ঠোটে রক্ত খেয়ে নিজেকে শান্ত করে। রক্ত খেয়ে আস্তে ধীরে শরীর থেকে হেলে দুলে নামছে উই কিন্তু ঠিক তখন ‘আউ’ চিৎকারে সে থেমে যায়। ভয়ে ফিলিকার জামায় লুকায়। তখন শুনতে পায় ফিলিকা কি যেনো বলছে-
‘দেখো তো বাবু আমার গালে ঠোটে আর স্তনে কিসে কামর দিছে’।
খুব নিখুঁত ভাবে সবকিছু পরীক্ষা করছে রিব্বিন। স্থানগুলো হালকা ফুলে আছে। ফিলিকাকে সে সান্ত্বনার বানী দেয়, ‘ আমি দেখছি বাবাই’ এই বলে, আদতে সে ফিলিকার স্তনে হাত ঢুকিয়ে পুরো হাতটা বসিয়ে দেয় স্তনে তার হাতের চাপ পড়তেই ফিলিকা একটু উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠে। তাতেই খুব ভয় পায় উই। তার ধারণা মেয়েটি কোন ভাবে তাকে জামার ফাঁকে লুকিয়ে থাকতে দেখেছে সে জন্যে তার এই চিৎকার বস্তুত কি ঘটেছে তা যাচাই বাচাই না করেই উই ভয়ে দৌড় দেয়। একদৌড়ে সে বাসায় পৌছায়।
ইডেক ছেলের আতঙ্কিত অবস্থা দেখে তাকে ধমকাতে শুরু করেন। তার পরেও কি ঘটেছে তা বলছে না দেখে তার ছেলের প্রতি সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। ছেলের এখন যে বয়স এই বয়সে কোন দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া অসম্ভবের কিছু না। অনেক পিড়াপীড়ির পর ছেলের কাছ থেকে শেষমেশ পুরো কথা বের হয়, উই কোন কিছুই গোপন করেনি বাবার কাছে। সত্যটা শুনার পর ইডেক’কে কিছুক্ষণ চুপ থাকতে দেখা যায়। নীরবতার পর্ব শেষে নিজে নিজেই বলে উঠলো-
ছিঃ ছিঃ
এই বলে উক্ত স্থান ত্যাগ করে ইডেক। এসময় উই’র চেহারা দেখার মতো ছিলো।
দিনের এই ঘটনার পর থেকে খুবই মন খারাপ ইডেকের। নিজের সন্তানদের মানুষ পরিচয়ে বড় করছে বলে তার খুব গর্ব হতো কিন্তু নিজের মধ্যে আজকে আর গর্বটা ধরে রাখতে পারছে না। মানুষের প্রতি তখনি তার ধিক্কার জন্মালো। কিছুদিন আগেও মানুষ নিজেদের প্রতিটা ব্যাপারের সাথে সাথে জৈবিক চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রেও খুবই সচেতন ছিলেন। এই জন্যে উত্তম সময় বেঁধে নিতেন রাতের আঁধার কিংবা দিনে বদ্ধরুম। এমতবস্থায় শিকারে বের হলে মানুষের ঠোটে কিবা অন্য কোথাও রক্তের ঝিলিক দেখা দিয়েছে কিনা সেদিকেও ইডেকদের নজর যেতো না। মানুষের চাহিদা গুলো তাদের মতো মিটাতে দেয়া হতো; যখনই মানুষের কাজ পূর্ণ হতো তখন চুপিচুপি তারাও নিজেদের খাবার টুকু চুষে নিতেন মানুষদের শরীর থেকে।
আজকের এই নেক্কার ঘটনা জানার পর থেকে ইডেক নিজেকে আর মানুষ ভাবতে পছন্দ করছে না তার এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে কেন সে নিজেকে ছারপোকা পরিচয় না দিয়ে ওই প্রানী গুলোর নাম দিতো এতোদিন। কেনও বা নিজের ছেলে মেয়ে সবাইকে মানুষ পরিচয় দিয়ে বড় করেছে, তার নিজের প্রতি নিজের ই খুব রাখ হচ্ছে এখন। মানুষের প্রতি তার এক ধরণের শ্রদ্ধাবোধ ছিলো এই ভেবে যে, মানুষ একমাত্র প্রানী যে তাঁর প্রতিটা ব্যাপার খুব নিয়ম মাফিক মেনে চলে। তাদের মধ্যে লজ্জা,শরম, বড়-ছোট, ইজ্জত, নীতিবোধ কতো কিছুই রয়েছে যার সবটুকু অন্য কোন প্রানের মাঝে নেই কিন্তু এতোদিনের আস্থা এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
এতদিন ইডেক নিজের জগতকে অনেক বড় মনে করে এসেছে এখন তার মনে হচ্ছে এই বাসাটা একটা জগত হতে পারে না, এর বাহিরে আসল জগত বিদ্ধমান। যে জগতে ফিলিকার মতো মেয়ে থাকে না, যে মেয়ে যৌবনের স্বাদ মিটানোর জন্যে নিজের পরিবার, সমাজ কিংবা নিজের কথা চিন্তা না করে বাগানে গিয়ে অন্য ছেলেকে নিজের সর্বত্ব দিয়ে দিতে কুষ্টাবোধ করে নি। তার মতো মেয়ে যে জগতে থাকবে সে জগতে কোন ভাবেই থাকা যাবে না। এমন একটা জগত ই তাকে খুঁজে নিতে হবে যে জগতে ফিলিকাদের মতো মেয়দের স্থান নেই।
ফিলিকার এই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটা ছারপোকা পরিবারের লজ্জার অন্ত নেই। এমন লজ্জাকর অবস্থায় থেকে নিজেদেরকে আর ছোট করতে পারবে না ইডেক। সেজন্যেই পরিবার নিয়ে অন্যত্রে পাড়ি জমায় সুন্দর এই শান্তির নীড় ছেড়ে। অথচ এই নীড়ে তুচ্ছ এই ঘটনা ছাড়া কোন কিছুরই কি অভাব ছিলো ইডেকের পরিবারের জন্যে।
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইডেকের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে একুশ শতকের কোন প্রগতিশীল মানুষ যদি তার এই ঘটনা শুনতে পায় তখন এই নিয়ে কি পরিমাণ হাসি ঠাট্টা হবে, ব্যাপারটাই আপাদত বিশদ ভাবনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়াইছে। এরকম কিছু যদি ঘটেও ছারপোকা পরিবারের কর্তা ইডেক সাহেব কি তখন জানতে পারবে? জানার পর তার প্রতিক্রিয়াও বা কেমন হতে পারে!
বোকাসোকা ইডেক একটা ব্যাপার জানেন না বলে নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া যায়। যে জন্যে মানুষের উপর তার আস্থা উঠেছে বস্তুত্ব মানুষ তারচেয়েও নেক্কার কাহিনী দিন দুপুরে রাস্তায় সেরে নেয়। সে ফিলিকাদের বাড়ি ছাড়ার আগেও জানতো না তার জন্যে পৃথিবীর মানুষ গুলো কতো নোংরা অবস্থায় নিজেদের জাহির করার জন্যে তৈরি হয়ে রয়েছে। আরেকটা সত্য কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় এখন, ইডেন এতো কাল যে অঞ্চলে ছিলো তা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো জায়গা। সামনে যেখানে পাড়ি জমাচ্ছেন তা অবস্থা কি হতে পারে একটু কল্পনা করে দেখেন।
নতুন পরিস্থিতি উই বা ইডেকের মনে কী রকম প্রতিক্রিয়া ঘটাতে তা অন্য সবার মতো আমারও জানার খুবই ইচ্ছে কারন আমিও যে ইডেকের মতো একজন। তফাৎ এইটুকু- আমি মানুষ রুপি ছারপোকা। সবকিছু দেখেও লজ্জায় পালিয়ে বাঁচতে চাই কিন্তু কোথাও কোন উপায় নেই। সবখানেই চক্ষুলজ্জা ভুলে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
সমাপ্তি
ছোট গল্পঃ আমি উই । লেখকঃ মাহতাব হোসেন