Tuesday, 25 April 2017

আত্মার বিয়োগ- কবিতা


দীর্ঘ অপেক্ষায় পরে থাকে মন
বাড়ির পাশে ষ্টেশন পানে,
ট্রেনের হুইসেল'এ নেচে উঠে মন
যেন এখনি চলে এসেছে প্রাণ।
দীর্ঘ দিনে গড়া এই বাঁধন, দুজন যেন
একই সুতোয় গড়া প্রাণ, একই অনুভূতি।
আগে তো হয় নি এমন, যখন গড়েনি বাঁধন
বাঁধনের টানে মন করে কেমন কেমন; মন যেন
রয়েছে পরে ওই লোকমন্দিরের ষ্টেশনে।

ঐদিন দিয়েছিলেন চিঠি বলেছিলেন তাতে,
আসিবেন ফিরে বাড়ি, কোন এক বসন্তের বিকেলে।
প্রতি বিকেলে ট্রেনেরা ঘরে ফিরে, ফিরে নানান মানুষ,
তবুও ফিরে না প্রাণ, ফিরে না তার স্বামী।
অশ্রুমাখা মুখে অপেক্ষা তার, সুখের জল চোখে,
কতো কথা আছে জমে, বলিবে বলে স্বামীর কাছে,
তবুও আসে না স্বামী, হয় না শেষ বসন্তের বিকেল।
অপেক্ষায় থেকে শুয়ে পড়ে কোন এক ক্লান্তি কালে,
শীতল পাটিতে নিদ্রা আসে, তাতেও আসে না স্বামী।
পাশের ঘরের কুটুমের কন্ঠে ভাংগে ঘুম, থামে অপেক্ষা,
অলক্ষুণে কথায় কেঁপে উঠে মন, থেকে যায় আশা
স্বামীকে ঘিরে কতো আয়োজন কতো কথা সবই মিছে,
মুহুর্তে তা যেনো হয়ে উঠেছে মিথ্যে, মরিচিকার বালুচর।

কতো মানুষ এসেছে দেখতে, শুধু যায় নি অভিমানী বধূ
ট্রেন যেন রাস্তা ভুলে পড়েছে মহা গর্তে! ক্রমেই
বেড়েছে তখন লাশের দল, বেড়েছে আত্নীয়ের ক্রন্দন
তবুও কাধে নি বধূ কাধে নি তার চক্ষু। 
শুধু ভুলেছে তখন, 
কিভাবে ভুলে থাকতে হয় অপেক্ষার প্রহর।

মাহতাব হোসেন 
২৫ই এপ্রিল ২০১৭।
( এই কবিতা প্রিয় বন্ধু যারীন তাসনিমকে উৎসর্গ করলাম।)    
কবিতা আত্মার বিয়োগ বাই মাহতাব হোসেন 

Monday, 24 April 2017

নির্ঘুম স্বপ্ন

তুই বাঁধনহারা তোর টানে
আমিও যে গৃহহারা
প্রিয় স্বপ্ন তুই নির্ঘুমা
তুই যৌবনা উদ্যোমী
তোকে ছুঁই ছুঁই করে
ছুঁতে আসে স্বপ্নবাজেরা।


তুই দেখেছিস প্রাণের স্পৃহা
তুই দেখেছিস হৃদয়ের টান
কাউকে ফেলে দেয়ার না
কাউকে ছোট করার না
তবুও ঝরে পড়ে কতো স্বপ্ন!
প্রিয় স্বপ্ন তুই কি অনুভব করিস
স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনা, কষ্ট জমাট
হৃদয়ের প্রাণহীন করুণ সঞ্চার।

প্রিয় স্বপ্ন যে বুকে বেঁধেছে তোকে পেতে,
তাতেও পারে নি হতে তোর মতো বাঁধনহারা।
তোরি নাম স্মরণ করে হৃদয়ে আজও
রক্তের সঞ্চালন হয় বেঁচে থাকার।
প্রিয় স্বপ্ন তুই যে বেঁচে থাকার মহাষুধ
তুই যে পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রাচীনতম প্রাণ
তুই যে হারিয়ে যাওয়া জীবনে হটাৎ করে
ফিরে পাওয়া প্রাণের সঞ্চালক।

মাহতাব হোসেন
২৪ই এপ্রিল ২০১৭
কবিতা নির্ঘুম স্বপ্ন বাই মাহতাব হোসেন

Saturday, 22 April 2017

মনের গড়ন- কবিতা


অপূর্ব সুন্দরে ঢেকেছে রুপ
শরীর আর দেহের গড়নে
তবু পাইনা ভরসা তা দেখে,
অচেনা বলে ভাবি মনের কথা
দুজন দুজনাতে যে দেদার তফাৎ।

রুপ দেখে বলতে পারি না নিশ্চিন্তে 
মনের সৌন্দর্যরূপ কি দেহের মতো?

শরীর দেখে যে কামনা জাগায় শরীররে 
মন দেখে সে কামনা কি জাগায় মনরে? 
এ জেন ভারি চিন্তার বস্তু, এ জেনো
কামনা আর মুক্ত থাকার চিন্তা একই সাথে।

আমি শরীরের পূজারি, আমি মনের কবি,
আমি শরীরে কামনা খুঁজি, মনে খুঁজি ছন্দ।
যে দেহে ছন্দ নাই সে দেহে আগুন জ্বেলে
কি বা আসে এই অশান্ত মনে;
মন যেখানে শান্তি না ই পায়, শরীর সেখানে
শান্ত রেখে কি বা আসে যায় কবি মনে।

মাহতাব হোসেন 
 এপ্রিল ২১, ২০১৭।
মনের গড়ন- কবিতা । মাহতাব হোসেন 

বুনো স্বপ্ন- কবিতা


তুমি দু:খের কবি তাই বলে কি,
আমি সুখের পাঠক হবো না।

তুমি দু:খ বুনো লেখায়, 
আমি সুখ দেখি কল্পনায়।

তোমার কল্পনা মিথ্যে হলেও,
আমার স্বপ্ন অর্থহীন নয়।
তুমি তো কল্পনা করতে শিখাও
আমি বাস্তবতা দ্যাখে শিখি।

ও আমার দু:খের কবি 
তোমার মনে ক্যানো এতো ব্যথা?
কেন'ই বা তোমার মনে এতো ক্ষোভ!

এই নষ্ট সমাজ নিয়ে তোমার এতো চিন্তা!
নষ্ট মানুষে তুমি কেন'ই বা এতো আশা দ্যাখো? 
তুমি কেন'ই বা রাজনীতিতে সততা খোঁজো?
এই বিলাসিতায়, আমার বড্ড হাসি পায়।
আমি পারি না তোমার মতো বিলাসি হতে,
আমার জ্বালা হয়; আমার ন্যাকামি মনে হয়,
তুমি নষ্ট সমাজে নতুন বীজ বুনতে চাও
হে কবি, এ আমি মেনে নিবো কি করে!

নষ্ট প্রেমে কাব্য আঁকলে পাঠক তা লুপে নেয় শুনেছি
নষ্ট সমাজে স্বপ্ন এঁকে, তুমিও কি চাও পাঠকের মন!
তাহলে শুনো; তোমার ইচ্ছেও ঠিক নষ্ট প্রেমের মতো,
যেখানে নষ্টামিই মূল বক্তব্য।

তুমি তরুণদের স্বপ্ন দেখাও; মুখ বুঝে থাকো নষ্টামিতে
এ সমাজ তোমাকে কি দিয়েছে কবি?
কি শিখিয়েছে?
আমি দেখেছি, সমাজের স্তরে স্তরে নোংরামির ঘন আবরণ।
তুমি কি দেখো নি, ক্ষমতার লোভে রাজপথে ঘটে যাওয়া
নেক্কার সব অপকর্ম!
নাকি তুমি আমাতে বিভোর ছিলে!
সেদিন যদি তুমি না'ই বা দ্যাখো, এসব অপকর্ম। 
তাহলে তুমি অন্ধ; তুমি নারী প্রেমে অন্ধ।
কবি আমি পারবো না; আমি পারবো না, অন্ধ মানবে ঘর সংসারে জড়াতে।

কবি এখনো সময় আছে,, তুমি সরে যাও তুমি ভুলে যাও
এই সমাজ তোমার জন্যে না; এই সমাজে স্বপ্ন না,
এখানে রক্ত রঙের খেলা বেশী মানায়। 
 তুমি ভুল সমাজে বীজ বপন করো না, কবি তুমি এই ভুল করো না।
কবি তুমি জানো না, এই জাতি স্বপ্নের চেয়ে রক্ত খেলায়
খেলতে বেশী দক্ষ; তুমি ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্বপ্ন দেখিও না।
এতটা সাহস তুমি দেখিও না।।

মাহতাব হোসেন
২৩ই এপ্রিল, ২০১৭

বুনো স্বপ্ন- কবিতা । মাহতাব হোসেন

শেষ দেখা- কবিতা



মনে আছে শেষ দেখার কথা
তোমার মনে কতই না ইচ্ছে,
দেখিয়েছো তখন আমার গালে
অনুভবে দিয়েছিলে চুম্বন; অসহনীয় ভাবে,
পড়েছে দাগ, দেখেছে মানুষ- নরম গালে চেয়ে। 


মাঝ ঘুমে আজও উঠি আঁতকে যখন ভাবি,  
 সে ব্যাথায় কিভাবে ছিলামও বা আমি চুপসে!
এ যেন তোমার কামনায় ডুবে রেখেছিলো,
আমার শরীরের প্রতিটি অনুভূতির দুয়ার। 


মনের তীব্র কামনা ছিলো তোমার হাতিয়ার,
শরীরের বেধম যৌবনা, যুগিয়েছে শক্তি;
এই দু'য়ে মিলে যেনো জাগিয়েছে লালসা 
আমার তুলতুলে গালখানার অন্তবিন্দুতে। 
তোমার চুম্বনে আমি হয়েছি বিস্মিত; হয়েছি স্তব্ধ। 
আমি নির্বাক আমি ক্ষুব্ধ- এ যেন ভোগের বস্তু। 


আমি ভীতু, তোমাকে ভোগ করার ইচ্ছে আমার নেই। 
আমি ফুলের সৌরভ ভালোবাসি, ছিঁড়ে ফেলার
হিম্মত আমার আজন্মেও হবে না, এই রাখি দাবি।

তোমার রিষ্টপুষ্ট দেহে যৌবন টলমলে
তোমায় দেখে কামনা জাগে কতো মনে। 
আমার মন বিষাদে ভরে যায় যখন ভাবি
কামনার ঘোরে, তোমার স্তন আমার হাতে।

আমি তোমার ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তুলি না,
আমি নিজেকে প্রশ্ন করি; ভালোবাসা আসলে কি? 
এ কি শরীরে থাকে, না সে মনের বিষয় মাত্র!
ঘুরে ফিরে প্রশ্নরা; তবুও আশে না মনমতো; 
আমি খুঁজি-যাযাবরের মতো হন্য হয়ে,
ভাবি প্রলাপের ঘোরে-এক জীবনে
ভালোবাসা কেন বা হবে ভোগের বস্তু!

মাহতাব হোসেন
২৩ই এপ্রিল, ২০১৭

শেষ দেখা- কবিতা । মাহতাব হোসেন 

Friday, 14 April 2017

আমি উই- ছোট গল্প

উই 
আমার নাম, জন্মসূত্রে ঢাকাইয়া হলেও পূর্বনিবাস বিক্রামপুরে। আমার দাদার দাদা তারও দাদার দাদা একদিন হুট করে কাউকে না বলে এক মিষ্টিঅলার হাত ধরে ঢাকায় পাড়ি জমায়। যদিও সে পিতামহ জানতেন না আসলে তিনি কোথায় যাচ্ছেন পরে অবশ্য এখানে মানুষের মুখে শুনে-বুঝে জানতে পারলেন তিনি বড্ড একটি শহরে- খুব উঁচু একটি দালানে আছেন। কুয়ো ঘরে বেড়ে উঠা ছোট পৃথিবী থেকে উঠে আশা সে বিস্ময় পুরুষের জানা ছিলো না পৃথিবীর আয়তন তার দেখা পৃথিবী থেকেও বিশালাকার। নতুন শহরে এসে তার কাছে সব কিছুই নতুন ঠেকছে। থাকার জন্যে দামী দামী জিনিষে নিজেকে মানিয়ে নিতে কিছু সময়ও লেগেছিলো তাঁর। ভদ্র পুরুষটির অভিজ্ঞতার আলোকে এখানের প্রতিটা আসবাবপত্রও তার কাছে নতুন লাগছে। খাদ্যাভাসের স্বাদেরও রয়েছে নতুনত্ব। এখানে এসে তাঁর প্রথন মনে হলো, গ্রামের চাষাভূষা আর শহুরে মানুষে কিছু পার্থক্য রয়েছে যা বহুকাল থেকে এই দু শ্রেনীকে পার্থক্যের আড়ালে বিভক্ত করে রেখেছে।

এতক্ষণে মাথায় উঁকিঝুঁকি ঘটতে পারে এই কিচ্ছা কাহিনীর ইতিহাস নিয়ে, কিভাবে এতো পুরানো কিচ্ছা আমার জানা। উঁকিঝুঁকি না আসলেও ব্যাপারগুলো জেনে রাখা ভালো, পরিবারের এই কিচ্ছা গুলো একটা রিচুয়াল পর্যায়ে ঠেকেছে। যার দ্বারা এই শহরে আমাদের গোড়াপত্তন তাঁর কাছ থেকে কিচ্ছা গুলো পরবর্তীতে তার নাতি নাতনি জেনেছে, এভাবে এক নাতি নাতনি থেকে অন্য নাতি নাতনিতে চলে এসেছে, যুগে যুগে চলে আশা কিচ্ছা গুলো আমরাও অন্যসব বংশধরদের মতো শুনে এসেছি। অতীতের আর সবার মতো আমরাও কিচ্ছাগুলো শুনে শিউরে উঠেছি। সাধারণত এরকম কাজে প্রচুর সাহসিকতার প্রয়োজন পড়ে। কিচ্ছা গুলো আমাদের কাছ থেকে শুনে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও বড় হবে। তাদেরও শিউরে উঠার অনুভূতি হবে, শুনার পর পূর্বপুরুষসে ভক্তি আর শ্রদ্ধাবোধে মাথায় তুলে রাখাতেও কার্পণ্যবোধ আসবে তাতে। এই সাহসী কাজের জন্যে তাদের মধ্যেও গর্ববোধ হবে যেমনটি এখন নিজের মধ্যেও হচ্ছে। পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলোও এমন গর্ববোধ নিজেদের মনে পুষে রাখতেন বলে মনে হচ্ছে।

‘উই’ নামটা নিয়ে কারো কারো প্রশ্ন বা জানার ইচ্ছেও থাকতে পারে, সাথে বয়সটাও। আবার এমনও হতে পারে নামটাকে সামান্য ব্যাপার ভেবে কেউ বা নিজের মধ্যে ইচ্ছেটাকে জাগতেও দিতে চাইবেন না। তবে সত্যি বলতে আমার নামের অর্থ কি, তা আমি দূরের কথা আমার বাবাও হয়তো এখনো জেনে উঠতে পারেননি। ভাসা ভাসা ভাবে জেনেছি আমাদের জাতের সাথে মিল রেখেই আমার নাম রাখা হয়েছে তখন। বহুবার ইচ্ছে হয়েছে অবশ্য এখনোও হচ্ছে বাবা মাকে জিজ্ঞেস করি- ‘উই’নামের মাজেজা কি কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারি নি, পারছিও না। প্রশ্ন করতে যাওয়ার আগেই নিজের মধ্যে এক প্রকার আড়ষ্টতা কাজ করে। যৌবনে ছেলে মেয়েদের মধ্যে এমন এক ধরণের আড়ষ্টতা কাজ করে যা তাকে কারো সাথে কথা বলতেও ইতস্ততায় ভুগায়। নিজের মধ্যে এমন কিছুই দেখা দিয়েছে কিনা তা বুঝা বা জানার চেষ্টাও করি নি কখনো।

আমাদের এই বিশাল তিন বেডের বাসায় আমরা মাত্র চারজন প্রানী। বাবা, মা, ছোট বোন ইকু আর আমি। অন্যান্য প্রানীর মতো আমাদেরও পড়ার বিশেষ একটা পদ্ধতি রয়েছে। আমাদের পদ্ধতিটা অবশ্য একটু অন্যরকম। এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না বরং এখন পরিবারের কথা বলতে মন চাচ্ছে- 

 ইডেক হলেন আমার বাবা। তাঁকে আমি আমার আইডল হিসেবে জানি। মানুষ সম্পর্কে তার কতো তত্ত্ব-জ্ঞান, বাবার কাছ থেকেই শিখেছি কিভাবে মানুষের সাথে ডিল করতে হয়। কিভাবে একটা মানুষকে বিরক্ত না করে তার কাছ থেকে প্রাপ্যটা আদায় করে নিতে হয়। বাঁচার জন্যেও জগতে বহু তত্ত্ব শিখতে হয়। তত্ত্বগুলো সব মৌখিক আর ব্যবহারিক, লিখিত তত্ত্বে এখানে অনীহা রয়েছে। এক রীতিতেই সবাই এখানে শিক্ষা নিয়েছে। বাবা তার বাবার কাছ থেকে, বাবার বাবা মানে আমার দাদা তাঁরও বাবার কাছ থেকে শিখে নিয়েছে। মৌখিক আর ব্যবহারিক তত্ব ছাড়া এখনে অন্য কোন তত্ব নেই; আমাদের স্বরণশক্তিও খুব তীক্ষ্ণ তাই সহজে কোন কিছু ভুলারও নয়। 

আমার মায়ের মধ্যে বাবার মতো অতো গুন নেই। বাবা তাঁকে বোকা বললেও তাঁর মধ্যে বেঁচে থাকার নিজস্ব কিছু কৌশল রয়েছে যা বাবাও আজ পর্যন্ত আয়ত্ম করতে পারেন নি। জগতে বাঁচার জন্যে অনেক বুদ্ধিমান বা চালাক হওয়ার প্রয়োজন নেই, তা আমার মা ফিরেক্স’কে দেখলেই অনুধাবন করা যায়। ইকু অবশ্য মায়ের মতো হয় নি মোটেও বরং বয়সে ছোট হলেও তার মধ্যে রয়েছে নানারকম চালাকি কৌশল যা দিয়ে সে সহসায় যে কাউকে গায়েল করে দিতে পারে।

পূর্বপুরুষদের সুবিধা আর নিরাপত্তার কথা ভেবে বারে বারে এই শহরে থাকার স্থান পরিবর্তিত হয়েছে বংশধরদের মধ্যে। সর্বশেষ আমরা যে বাড়িতে এখন উঠেছি তার নাম ‘ফিলিকা গার্ডেন’। বাড়ির সম্মুখভাগ ঢুকতেই প্রাচীরের গায়ে চীনা মাটির খোদাই করা বড় বড় অক্ষরে লেখা বাড়ির নামটি। প্রথম দর্শনে যে কারো চোখে পড়বে চীনা মাটিতে লেখা বড় বড় অক্ষরগুলো। ঠিক আজ থেকে দশদিন আগে আমরা উঠেছি ‘ফিলিকা গার্ডেন’ এ। হুট করে একদিন দাদা-দাদীর মর্মহত দুর্ঘটনার পর বাবা দুঃখে কষ্টে আগের বাড়িটা ছাড়তে বাধ্য করেন বাড়ির সবাইকে। ওই বাড়িতে বহু আগ থেকেই আমাদের থাকা, দাদার কৈশোরে ওই বাড়িতে তার বাবা মায়ের হাত ধরে উঠেছেন। তারপর থেকে দশদিন আগ অবদি আমাদের ওখানে থাকা। কতো স্মৃতিই না ওই বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে জড়ো হয়ে আছে। সুঃখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সব মিলিয়ে জীবন খুবই অদ্ভুত। ক্ষুদ্র এই জীবনে কতো কিছুর সাথেই না মোকাবেলা করতে হয়- 
স্মৃতি কখনো মনে করতে নেই, তাতে এক ধরণের ছাপা কষ্ট অনুভূত হয় একটু বাতাসেও কষ্টগুলো হু হু করে কেঁদে উঠে।

আমাদের নতুন এই বিশাল বাড়িতে আরেক পরিবারও থাকে, মজার বিষয় হলো আমাদের মতো মিলিয়ে দেখলে তারাও সংখ্যায় চার। এই অল্প কয়দিনে ওই পরিবারের প্রতি আমাদের আস্থা গড়ে উঠেছে। এতো নিরিহ আর নিরিবিল ভদ্র পরিবার আমি আগে কখনো দেখি নি। অত্র পরিবারের কর্তা কি করেন তা আমার জানা নেই। তাঁকে সাপ্তায়ে ছয়দিন ঘুম থেকে উঠে অফিসে ছুটতে দেখি। নিশ্চয়ই বড়সড় কোন অফিসের উদ্ধতন কর্তা হবেন আচার আচরণ,অর্থ- প্রাচুর্য দেখে তাই অনুমেয়। 

প্রথম দেখাতেই বাড়ির ভদ্র মহিলাকে যে কারো অলস স্বভাবের মনে হতে পারে, প্রকৃত অর্থে সে এমনই। সারাদিন বাসায় বসে ঝিমায় আর টিভি দেখে অবশ্য অন্যকোন উপায়ও নেই। সংসারে কাজ করার জন্যেও কিছু থাকে না। দু-বেলা আয়া-বুয়া এসে সবকিছু করে রেখে যায়। আমাদের ছোটটা মাঝে মাঝে এই ভদ্র মহিলাকে জ্বালাতন করতেও ভুলে না। ঝিমাতে থাকা অবস্থায় ইকু তার গাঁ ঘেঁসে তাকে ছোট একটা কামর দেয় এতে মহিলা আচমকা চমকিয়ে উঠেন। দেখে নিজের হাসি চেপে রাখতে কষ্ট হয়। মহিলার করুণ মুখখানা দেখে তখন অবশ্য হুট করে মায়া জাগে নিজের মধ্যে। নিখাত ভদ্র দেখেই কিছু বলেন না মহিলা নাহলে ইকুর বাচ্চামি গুলো মেনে নেয়ার মতো ছিলো না।

এই পরিবারে যে দুই-বাচ্চা রয়েছে তার মধ্যে ছোট বাচ্চাটা ক্লাস সিক্সে পড়ে তার নাম রোমেন তাকেও হস্তনস্ত করতে ইকু ভুলে না। অন্য যে বাচ্চাটি রয়েছে তাকে অবশ্য বাচ্চা বললে ভুল হবে। আদর ভালোবাসা আর বড় সন্তান বলে পরিবারের কাছে সে বাচ্চা হতে পারে আদতে সে বাচ্চা নয়। তার নামেই এই বাড়ির নামকরণ করা হয়েছে। ফিলিকা- সে ক্লাস নাইনে পড়ে। এ বয়সে অন্য সব মেয়ে-ছেলের মতো তারও যৌবনের শুরুটা হয়েছে। আঁকা বাঁকা করে চলা, চলনা নিয়ে কথা বলা, কোন ছেলেকে দেখলে বার বার আড় চোখে তাকানো, চেহারায় বিশেষ লাবণ্য ভাব ফুটে ওঠা আর বাতাবী লেবুর মতো ছোট ছোট স্তন গুলোর জেগে ওঠা সব মিলিয়ে যৌবনের শুধুর লক্ষণ গুলো তার মধ্যে রয়েছে।

ইডেক ছোট বেলায় তার ছেলে মেয়েকে কিছু বিধি নিষেধ শিখিয়েছে যা জীবন যুদ্ধে চলতে গেলে সবার মান্য করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। তাঁর সব কিছু এখনো তীক্ষ্ণভাবে সঞ্চালন করে রেখেছে উই কিন্তু তারপরেও তারমধ্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। বাবার বিধি নিষেধ গুলো এমন ছিলো, ‘মেয়ে-ছেলের ব্যক্তিগত স্থান গুলোর দিকে তাকাতে নেই, সে গুলো স্পর্শ করা বা তাতে কামড় বসানো খুবই জগন্যতম কাজ। কাজগুলো থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। এখানে আশার পর গত তিন-চার দিন থেকে বাবার কথায় অনড় থাকতে পারছে না উই। সামনে পারবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্ধিহান দেখা দিয়েছে তার মধ্যে। এই স্থানে আশার আগে ইউ কখনো তার বয়সী রূপবতী-সুন্দরী মেয়ে দেখে নি, দেখলেও বা ওভাবে কখনো চোখ মেলে তাখানোর ইচ্ছে জাগে নি। ইতিমধ্যে একটা কারনে উই’র মনে হিম বাতাস বয়ে যাচ্ছে যে বাতাস শুধু মাত্র রক্তস্রোত দ্বারাই বন্ধ হতে পারে। হিম বাতাস বয়ে যাওয়া কারণটা নিয়ে উইয়ের মনে নানা চিন্তা। একা একা ভেবে কোন কিছুর কূল কিনারা পাচ্ছে না সে, তাদের দুজনের বয়স ই প্রায় কাছাকাছি অথচ দু’জন দু মেরুতে বাস করছে। হিসেব করলেও দেখা যাবে দু’জন একই ক্লাসে পড়ছে কিন্তু দুজনের পড়ালেখার ধরণেও কতো ভিন্নতা। পড়ার জন্যে ফিলিকাকে কতো কাঠামোর মধ্য দিয়েই না যেতে হয় কিন্তু উই বেচারা, তার কাজ হচ্ছে বাবার কাছ থেকে আর পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বশিক্ষিত হয়ে বেঁচে থাকা। শরীরের লেনদেনেও দুজনে কতো পার্থক্য-এই বয়সে ফিলিকা চায় তার ক্লাস টেন’এ পড়া লিকলিকে শুকনা গড়নের ছেলে বন্ধুটিকে কাছে পেতে। যার শরীরের উষ্ণতায় সে নিজেকে অন্যজগতে খুঁজে পেতে চায় আর একই সময়ে উই চায় টগবগে তরুণীর চঞ্চলা দেহের রক্তের ঘ্রাণ। 

গত দু’দিন আগে উই কি দেখেছে যার জন্যে তার মধ্যে শান্ত ভাবখানা নিমিষেই দুমড়ে মুছরে ভেঙ্গে যাচ্ছে! যে কখনো বাবার কথায় অবাধ্য হয় নি সে কিনা উষ্ণ রক্তের খেলায় মেতে উঠেছে। যেদিনের ঘটনা নিয়ে তার মনে নানা রকম উঁকি ঝুঁকি সেদিন বিকেলে কোন এক বিশেষ কারনে উই’কে বাড়ির ছাদে উঠতে হয়েছে। তখন ফিলিকা আর লিকলিকে গড়নের একটা ছেলেকে ছাঁদে দেখে। যাদের ভাবখানা দেখে লজ্জায় সরে আসতে চাইছিলো কিন্তু নিজের মধ্য থেকে কি যেনো তাকে আড়ষ্ট করে রেখেছে থেকে যাওয়ার জন্যে। উই’র পুরো শরীর জুড়ে রক্তের খুদার জোয়ার বইতে লাগে তখন, নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট কষ্ট করতে হয়েছে কোন ভাবেই ভেতরের রাক্ষুসে ভাবটা যেতে চাচ্ছিলো না। অনেক কষ্টে নিজেকে দমিয়ে বাসায় যেতে উদ্যত হয় উই।

আজকে সারাদিন বাসায় বসে বসে সময় কাটতে চাচ্ছে না উই’র। এমন অবস্থায় ইডেক ছেলেকে কোন এক কাজে বাড়ির পাশে বাগানে যেতে বলেন। বাবার অনুমতি পেয়ে ছেলেও হন হন করে বাগানে ছুটে যাচ্ছে। হুট করে ফিলিকাকে বাগানের মঝখানে দেখে সে থমকে দাঁড়ায়। তার পাশে একটা ছেলেও ছিলো তাকে সে আগেও দেখেছে। ছেলেটির নাম- রিব্বিন। মাত্রই উই খুব স্পষ্ট ভাবে শুনতে ও জানতে পেয়েছে নামটা- 
 ‘রিব্বিন বাবাই আস্তে চাপ দাও আমি খুব ব্যাথা পাচ্ছি’। 

ফিলিকার মুখে একথা শুনে ঘেন্নায় উই এর গাঁ জ্বলে উঠলো তারপরেও তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ কারবার গুলো দেখে যাচ্ছে। এমন ভাবে সে দেখছে যেনো কোথাও লুকানোর প্রয়োজনবোধ টুকুও করলো না। বেশরমের মতো উই দেখে যাচ্ছে রিব্বিন চুমু খাচ্ছে ফিলিকের। দুজনের স্পর্শে দু ঠোট থেকে শুরু করে গাল অবদি তাদের রক্তের শিরা গুলো ভেসে উঠতে চাইছে। এই অবস্থায় উই নিজেকে আর মানুষ বলে দমিয়ে রাখতে পারছে না। আজ প্রথম সে তার বাবার কোন যুক্তিকে অর্থহীন বলে উড়িয়ে দিলো।

ইডেক সব সময় ছেলেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখিয়েছে এবং নিজেদের সে মানুষ বলেও দাবী করেন কিন্তু উই কখনো বাবার সাথে তর্কে যায় নি। তার নিজের কাছে নিজেদেরকে পরজীবীই মনে হয়। তাদেরকে তো সবসময় অন্যের দয়ার উপর বেঁচে থাকতে হয়। অবশ্য এ বেঁচে থাকাকে অন্যের দয়া বললেও ভুল হবে বরং অন্যের সরলতাকে পুঁজি করে তাদেরকে বেঁচে থাকতে হয়। টগবগে তাজা রক্ত দেখে উই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে নি। তড়িঘড়ি করে সে ফিলিকার গায়ে উঠে যায়। নরম দেহে স্তন, গাল আর ঠোটে রক্ত খেয়ে নিজেকে শান্ত করে। রক্ত খেয়ে আস্তে ধীরে শরীর থেকে হেলে দুলে নামছে উই কিন্তু ঠিক তখন ‘আউ’ চিৎকারে সে থেমে যায়। ভয়ে ফিলিকার জামায় লুকায়। তখন শুনতে পায় ফিলিকা কি যেনো বলছে- 
 ‘দেখো তো বাবু আমার গালে ঠোটে আর স্তনে কিসে কামর দিছে’। 

 খুব নিখুঁত ভাবে সবকিছু পরীক্ষা করছে রিব্বিন। স্থানগুলো হালকা ফুলে আছে। ফিলিকাকে সে সান্ত্বনার বানী দেয়, ‘ আমি দেখছি বাবাই’ এই বলে, আদতে সে ফিলিকার স্তনে হাত ঢুকিয়ে পুরো হাতটা বসিয়ে দেয় স্তনে তার হাতের চাপ পড়তেই ফিলিকা একটু উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠে। তাতেই খুব ভয় পায় উই। তার ধারণা মেয়েটি কোন ভাবে তাকে জামার ফাঁকে লুকিয়ে থাকতে দেখেছে সে জন্যে তার এই চিৎকার বস্তুত কি ঘটেছে তা যাচাই বাচাই না করেই উই ভয়ে দৌড় দেয়। একদৌড়ে সে বাসায় পৌছায়।

ইডেক ছেলের আতঙ্কিত অবস্থা দেখে তাকে ধমকাতে শুরু করেন। তার পরেও কি ঘটেছে তা বলছে না দেখে তার ছেলের প্রতি সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। ছেলের এখন যে বয়স এই বয়সে কোন দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া অসম্ভবের কিছু না। অনেক পিড়াপীড়ির পর ছেলের কাছ থেকে শেষমেশ পুরো কথা বের হয়, উই কোন কিছুই গোপন করেনি বাবার কাছে। সত্যটা শুনার পর ইডেক’কে কিছুক্ষণ চুপ থাকতে দেখা যায়। নীরবতার পর্ব শেষে নিজে নিজেই বলে উঠলো-
ছিঃ ছিঃ 

এই বলে উক্ত স্থান ত্যাগ করে ইডেক। এসময় উই’র চেহারা দেখার মতো ছিলো।

দিনের এই ঘটনার পর থেকে খুবই মন খারাপ ইডেকের। নিজের সন্তানদের মানুষ পরিচয়ে বড় করছে বলে তার খুব গর্ব হতো কিন্তু নিজের মধ্যে আজকে আর গর্বটা ধরে রাখতে পারছে না। মানুষের প্রতি তখনি তার ধিক্কার জন্মালো। কিছুদিন আগেও মানুষ নিজেদের প্রতিটা ব্যাপারের সাথে সাথে জৈবিক চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রেও খুবই সচেতন ছিলেন। এই জন্যে উত্তম সময় বেঁধে নিতেন রাতের আঁধার কিংবা দিনে বদ্ধরুম। এমতবস্থায় শিকারে বের হলে মানুষের ঠোটে কিবা অন্য কোথাও রক্তের ঝিলিক দেখা দিয়েছে কিনা সেদিকেও ইডেকদের নজর যেতো না। মানুষের চাহিদা গুলো তাদের মতো মিটাতে দেয়া হতো; যখনই মানুষের কাজ পূর্ণ হতো তখন চুপিচুপি তারাও নিজেদের খাবার টুকু চুষে নিতেন মানুষদের শরীর থেকে।

আজকের এই নেক্কার ঘটনা জানার পর থেকে ইডেক নিজেকে আর মানুষ ভাবতে পছন্দ করছে না তার এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে কেন সে নিজেকে ছারপোকা পরিচয় না দিয়ে ওই প্রানী গুলোর নাম দিতো এতোদিন। কেনও বা নিজের ছেলে মেয়ে সবাইকে মানুষ পরিচয় দিয়ে বড় করেছে, তার নিজের প্রতি নিজের ই খুব রাখ হচ্ছে এখন। মানুষের প্রতি তার এক ধরণের শ্রদ্ধাবোধ ছিলো এই ভেবে যে, মানুষ একমাত্র প্রানী যে তাঁর প্রতিটা ব্যাপার খুব নিয়ম মাফিক মেনে চলে। তাদের মধ্যে লজ্জা,শরম, বড়-ছোট, ইজ্জত, নীতিবোধ কতো কিছুই রয়েছে যার সবটুকু অন্য কোন প্রানের মাঝে নেই কিন্তু এতোদিনের আস্থা এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়।

এতদিন ইডেক নিজের জগতকে অনেক বড় মনে করে এসেছে এখন তার মনে হচ্ছে এই বাসাটা একটা জগত হতে পারে না, এর বাহিরে আসল জগত বিদ্ধমান। যে জগতে ফিলিকার মতো মেয়ে থাকে না, যে মেয়ে যৌবনের স্বাদ মিটানোর জন্যে নিজের পরিবার, সমাজ কিংবা নিজের কথা চিন্তা না করে বাগানে গিয়ে অন্য ছেলেকে নিজের সর্বত্ব দিয়ে দিতে কুষ্টাবোধ করে নি। তার মতো মেয়ে যে জগতে থাকবে সে জগতে কোন ভাবেই থাকা যাবে না। এমন একটা জগত ই তাকে খুঁজে নিতে হবে যে জগতে ফিলিকাদের মতো মেয়দের স্থান নেই। 

ফিলিকার এই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটা ছারপোকা পরিবারের লজ্জার অন্ত নেই। এমন লজ্জাকর অবস্থায় থেকে নিজেদেরকে আর ছোট করতে পারবে না ইডেক। সেজন্যেই পরিবার নিয়ে অন্যত্রে পাড়ি জমায় সুন্দর এই শান্তির নীড় ছেড়ে। অথচ এই নীড়ে তুচ্ছ এই ঘটনা ছাড়া কোন কিছুরই কি অভাব ছিলো ইডেকের পরিবারের জন্যে।
 তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইডেকের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে একুশ শতকের কোন প্রগতিশীল মানুষ যদি তার এই ঘটনা শুনতে পায় তখন এই নিয়ে কি পরিমাণ হাসি ঠাট্টা হবে, ব্যাপারটাই আপাদত বিশদ ভাবনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়াইছে। এরকম কিছু যদি ঘটেও ছারপোকা পরিবারের কর্তা ইডেক সাহেব কি তখন জানতে পারবে? জানার পর তার প্রতিক্রিয়াও বা কেমন হতে পারে!

বোকাসোকা ইডেক একটা ব্যাপার জানেন না বলে নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া যায়। যে জন্যে মানুষের উপর তার আস্থা উঠেছে বস্তুত্ব মানুষ তারচেয়েও নেক্কার কাহিনী দিন দুপুরে রাস্তায় সেরে নেয়। সে ফিলিকাদের বাড়ি ছাড়ার আগেও জানতো না তার জন্যে পৃথিবীর মানুষ গুলো কতো নোংরা অবস্থায় নিজেদের জাহির করার জন্যে তৈরি হয়ে রয়েছে। আরেকটা সত্য কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় এখন, ইডেন এতো কাল যে অঞ্চলে ছিলো তা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো জায়গা। সামনে যেখানে পাড়ি জমাচ্ছেন তা অবস্থা কি হতে পারে একটু কল্পনা করে দেখেন।
নতুন পরিস্থিতি উই বা ইডেকের মনে কী রকম প্রতিক্রিয়া ঘটাতে তা অন্য সবার মতো আমারও জানার খুবই ইচ্ছে কারন আমিও যে ইডেকের মতো একজন। তফাৎ এইটুকু- আমি মানুষ রুপি ছারপোকা। সবকিছু দেখেও লজ্জায় পালিয়ে বাঁচতে চাই কিন্তু কোথাও কোন উপায় নেই। সবখানেই চক্ষুলজ্জা ভুলে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।



সমাপ্তি 
ছোট গল্পঃ আমি উই । লেখকঃ মাহতাব হোসেন 

Sunday, 9 April 2017

অভ্যেস

অভ্যেস 

আমি মিথ্যে বলি না কিন্তু প্রতি দুপুরে 
অফিস থেকে ফোন আসলে বলি আমি রাস্তায়।

আমি দুর্নীতি করি না কিন্তু টেবিলের নিচ দিয়ে কেউ
কিছু দিতে চাইলে না করি না। 

আমি খেলা বুঝি না কিন্তু বাংলাদেশ
এক ম্যাচ হেরে গেলে গালি দিতে ভুলি না।

আমি রাজনীতি ঘৃণা করি কিন্তু রাজনীতিবিদদের
সমালোচনা না করে থাকতে পারি না। 
আমি ধর্মের কথা বলি কিন্তু দিনশেষে দেখা যায় 
কারো না কারো সাথে আমার ঝগড়া লেগে থাকে। 
আমি সমাধিকারে বিশ্বাসী কিন্তু কখনো কখনো
দেখা যায় বৌয়ের গাল, হাত-পা ফুলা থাকে।

আমি মাতলামি করি না কিন্তু মাঝে মাঝে দারোয়ান
বাসার সামনে থেকে তুলে বাসায় দিয়ে যায়।
আমি নতুন সভ্যতার শিক্ষিত প্রানী কিন্তু যুগে যুগে 
বেড়ে উঠা মনের জন্তু থেকে আলাদা নয়।

কবিতা অভ্যেস বাই মাহতাব হোসেন 

Wednesday, 5 April 2017

বিচার-ছোট গল্প

ন্ধ্যা থেকে টিপ টিপ গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এমন বৃষ্টি খুবই বিরক্তিকর, কিন্তু তাতে করার কিছু থাকে না। 

এমন বৃষ্টিতে শুকু মিয়ার মন খারাপ থাকে। এখন বসে বসে মনের দুঃখে বিড়ি ফুকছে সে। এসময় তার মনে নানা রকম চিন্তা কাজ করে। এতো ছোট পরিবার তারপরেও খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে, তার যে চাকুরী তা দিয়ে সব কিছু পোষানো যাচ্ছে না। এই যুগে ছয় হাজার টাকা দিয়ে এমনই একটা উপ শহরে চলা শুধু মুখের কথাই নয় দুঃসাধ্য ব্যাপারও বটে।

-শুকু মিয়া...ও শুকু মিয়া, আছো নাকি ভেতরে’। 

নিজের নাম শুনে তার চিন্তায় ছেদ পড়লো। এতো রাতে কার আবার মরার ব্যাতিক হলো। কবর স্থানে কবর খুড়ার চাকুরীতে এই একটা অসুবিধা। রাত নাই দিন কখন যে মানুষ মরে। দিনে কে মরলো না মরলো তা নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেই। তখন মাথা ব্যাথা থাকলে থাকবে কাসেম মিয়ার। দিনে যা ঘটে তা কাসেমের দেখার বিষয়। এতো বিশাল কবর স্থানে তারা মাত্র দুজন মানুষ বারো ঘন্টা করে ডিউটি দেয়। শুকু মিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুটা বেজে বিশ মিনিট। তার টিনের দেয়ালে টাঙ্গানো ছোট ঘড়িটা সব সময় কাজ করে না। মাঝে মাঝে সকাল বেলায়ও দেখায় ঘড়িতে রাত তিনটা। তারপরেও কেনো যেনো মনে হচ্ছে আজকে ঘড়ি সময়টা ঠিক দেখাচ্ছে। 

গুঁড়ি বৃষ্টিতে কবর স্থানের এই ছোট কামরা থেকে বের হতে মন চায় না শুকু মিয়ার। তারপরেও ঠেকায় পড়ে বের হতে হচ্ছে তাকে। নিজের মধ্যে বিরক্তি চেপে ছোট লাইটটা নিয়ে গেটের কাছে যায়। গেটের সামনে চার-পাঁচ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সবার শরীর হালকা ভেজা আর চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। 

শুকু মিয়া কাছে আসতেই তাদের মধ্যে একজন বলে উঠে, ‘তারাতারি গেট খুলো মিয়া, কথা আছে তোমার সাথে’। 

গেট খুলতে না খুলতেই গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের মধ্যে একজন তরিঘরি করে গেটের ভেতরে ঢুকে পড়লো। লোকটির নাম লোকমান। যদিও এই লোকটার নাম জানতে শুকু মিয়ার একমাস লেগেছিল। সে নিজেও জানে না লোকটার নাম সে জানতে পারবে। তার তো জানার কোন ইচ্ছেও ছিলো না। যাইহোক সে আবার অন্য গল্প। না জানলেও হবে। 

‘চলো, সাইডে চলো। তোমার সাথে কথা আছে’ 

এই বলে লোকমান শুকু মিয়াকে সাইডে নিয়ে গেলো। তারপর বলতে শুরু করলো কথা- 
‘তোমাকে আমাদের জন্যে একটা উপকার করতে হবে। এই জন্যে অবশ্য আমরা তোমাকে প্রাপ্য সম্মানী দিবো’। 

‘কি উপকার তা তো আগে শুনতে হবে। না শুনলে কিভাবে সাহায্য করবো’-মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনার পর শুকু মিয়া বললো। 

‘সবই বলবো, তার আগে বলে রাখি রাতের এই ব্যাপার গুলো যাতে দুনিয়ার কেউ না জানে। তোমার বৌ কিংবা তোমার সাথে ডিউটি করা কাসেমও না’। 

‘না কেউই জানবে না’ 

কথাটা বললেও মনে মনে শুকু মিয়া খুবই আগ্রহী হয়ে আছে পুরো ঘটনা জানার জন্যে।

‘আচ্ছা শুনো, আমাদের সাথে একটা লাশ আছে, চটে করে প্যাচানো। তোমার কাজ হচ্ছে লাশটাকে কৈই কবর দিবো তা দেখিয়ে দেয়া। কবর খোডা আর দাফনের কাজ সব কিছু আমরাই দেখবো। লাশের গোসলও করানো লাগবে না। লাশ কৈই থেকে আসলো, লাশের কি হলো, এসব ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। এই জন্যে আমরা তোমাকে অনেক টাকা দিবো’। 

কথা গুলো শুনে তার গায়ের লোম শিহরিত হয়ে উঠেছে। কোনো মানুষকে কবর দিতে গিয়েও কখনো তার এমন হয় নি। এমুহূর্তে কথা বলতেও শুকু মিয়ার তোতলামি হচ্ছে-
‘আ আ ...আমি... আ... মি... করবো সাহায্য? এ...তো মেলা পাপের কাম’। 

‘শুনো মিয়া এই পাপের সব বোঝা আমাদের, গুনাহ যা হবে তার দায় সব আমরা নিবো, তুমি শুধু আমাদের সাহায্য করবে। তাতে করে তুমি কিছু টাকা পাবে আর লাশটা পবিত্র স্থানে ঘুমাতে পারবে’। 

লোকমানের কথায় আশ্বস্ত হয় শুকু মিয়া। লোকটার কথা তার মনে ধরেছে। এ কথাও সত্য, সে যদি তাদের সাহায্য না করে তাহলে লোকগুলো লাশটাকে নদীতেও ফেলে দিতে পারে। তার উপর নিজের যে কিছু টাকা আসার, সেগুলোও হাত ছাড়া হয়ে যাবে। 

‘আপনারা আমাকে কতো দিবেন, বিশ হাজার দিতে পারবেন তো’। নিজের লোভকে দমাতে না পেরে একদমে কথা গুলো বলে ফেললো শুকু মিয়া। কথাটা শুনে লোকমান হাসলো। তাচ্ছিল্য ভরা হাসি। বিশ নয় তোমাকে পঁচিশ হাজার ই দিবো, কিন্তু শর্ত আছে। কেউ যাতে ব্যাপারটা না জানে। এমন ভাবে কাজটা করতে হবে সকালে যাতে কাসেমও টের না পায় রাতে এখানে কি হয়েছিলো। কেউ টের পেলে তোমার পরিবারের কি হবে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না’। 


মাথা নাড়িয়ে লোকটার কথায় সায় দিলো শুকু মিয়া। এই মুহূর্তে শুকুর চেহারায় অসহায়্যত্ব ফুটে উঠেছে। মনে মনে এই জন্যে নিজেকে দুষলেন। 


‘শালা....এই জন্যেই অন্যের সাহায্যে জড়াতে নেই। সাহায্যের জন্যে কিছু টাকা দিবে তার জন্যে আবার নিরবে হুমকিও দিচ্ছে। মগের মুল্লুক পাইছে’। কথাগুলো নিরবেই নিজের মনে নিজেকে বলে গেলো শুকু। 


‘নেও তোমার সম্মানীটা রাখো’ কথাটা শুনে নিজের হুশ ফিরে পেলো। 

এতো বড় টাকার ব্যান্ডেল। এর আগে শুকু একসাথে কখনো দেখে নাই। টাকার ব্যান্ডেলটা নিয়ে কোমরে গিঁট দিয়ে রেখে দিলো। 

লোকমানের ইশারায় বাকি সবাই লাশটা ধরাধরি করে গেটে ঢুকালো। শুকু মিয়া তাদেরকে পথ দেখাচ্ছে, কোথায় লাশটা নিয়ে যেতে হবে। 

কবরের শেষ প্রান্তে সবাই লাশটা নিয়ে জড়ো হলো। সাধারণত কবরের এই সাইডে কেউ ভুলেও আসে না। কাসেম বা শুকুও না। এই দিকে সাপ জোকের বিষণ উৎপাত। অবশ্য লুকিয়ে কবর দেয়ার জন্যে জায়গাটা সবচেয়ে উত্তম। প্রায় আধ ঘন্টা কাজ করার পর কবর খোড়া আর দাফন কাজ শেষ হলো। সব কাজ লোকগুলোই করলো। শুকু মিয়া এতে ব্যাপক অবাক হলো। মনে মনে মানুষ গুলোকে বেকুব বলতেও ভুলে নাই। এতো গুলো টাকা দিলো তারপরেও তাকে দিয়ে এক টুকরো মাটিও কাটতে দেয় নাই। এতে অবশ্য শুকু খুবই খুশী। লাশের যে কোন কাজ করলে সে গোসল করে। এটা তার এক প্রকার বাতিক। এইদিক থেকে লোকগুলো তাকে রাতে গোসল থেকে মুক্তি দিলো। 

কবর দেয়া শেষে কবরটা এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে কারো বুঝার সাধ্য না হয় এটা নতুন কবর। অবশ্য কিভাবে সাজালে এমন দেখাবে তার সবকিছু বাতলিয়ে দিয়েছে শুকু মিয়া। লোকগুলো শুধু তার কাছে এই একটা ব্যাপারই জানতে চেয়েছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। বৃষ্টি হওয়াতে এই একটা সুবিধে- কবর সাজাতে আরো সহজ হয়েছে। 

কবর দেয়া শেষে লোকগুলো চলে যায়। যাওয়ার আগে সব কিছু লাইট দিয়ে ভালো করে পরীক্ষা করে নেয় শেষ বারের মতো। কোন প্রমাণ না রেখেই সবাই বের হয়ে যায়। যাওয়ার আগে কেউ এখানে হাত মুখও ধুলো না। হাত-পায়ে কাঁদা মাটি নিয়েই রওনা দিলো। যাওয়ার আগে শুকু মিয়াকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতেও ভুলে নাই কেউ। 

এখন সকাল পাঁচটা বাজে। তারপরেও তার চোখে একফোঁটা ঘুম নেই। টাকা যে তার ঘুম হানির কারন তা শুকু মিয়া জানে না। নিজের মনে কতো স্বপ্ন। গত আটচল্লিশটা বছর পার করেও সে কখনো এক মুঠে এতো টাকা দেখে নি। তার বয়স যখন সতেরো, তখন যে পাশের বাড়ির চুমকিকে নিয়ে এই শহরে পালিয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসে; তারপর আর কোথাও যাওয়া হয় নি। এই প্রথম তার ইচ্ছে, নিজের বৌ আর ছাব্বিশ বছরের ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার। বিয়ের পাঁচ বছর পর যে তার পুত্র সন্তান হয়েছে তারপর থেকেও বৌ বা সন্তানকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে পারে নাই। পরিবারের ঘানী টানতে টানতে কখন যে বয়সটা শেষ হয়ে গেলো তা বুঝার মতো অবস্থাও হয় নি শুকু মিয়ার। এক সময় শুকুও তো তার একমাত্র সন্তান রাসেল’র মতো টগবগে যুকব ছিলো। তখন কতোই না ইচ্ছে ছিলো বৌ আর সন্তানকে নিয়ে ঘুরার, কিন্তু হায় কপাল। এখন সবই অতীত। সবই আবেগ। 


‘এই সকাল সকাল কে আবার গেট পিটা পিটি শুধু করলো। সবে মাত্র চোখে একটু ঘুম লেগে এসেছে, আজকে বুঝি কেউ একটু ঘুমাতেও দিবে না’। 

ঘড়িতে এখন সকাল সাতটা। তারমানে কাসেম আসে নি এখনো, এটা নিশ্চিত। কাসেম কখনো আটটার আগে আসে না। শুকু মিয়া ঘরের কোনে লুকিয়ে রাখা টাকা গুলো আবার কোমরে গুজে নিলো। তারপর গেটের দিকে রওনা দিলো চোখ কচলাতে কচলাতে। 


সাতসকালে গেটে নিজের বৌকে দেখে ভূত দেখার মতো ভয় পেয়েছে শুকু। চুমকি তো কোন বিপদ ছাড়া এখানে আসে না। এমনিতেই বেচারী কবরকে খুব ভয় পায়। তার মানে পরিবারের কোন বিপদ, এতো সকালে আসছে মানে ধরে নেয়া যায় বড় ধরনের কোন বিপদ। মনে মনে আল্লাহ্‌কে ডাকে শুকু- ‘আল্লাহ্‌ মাবুদ আমাদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করো’। কি হয়েছে তা জানতে চাওয়ার আগেই বৌ কাঁদতে কাঁদতে বলে- 


‘ও রাসেলের বাপ। রাসেল তো গত বিকালে বের হইছে এখনো বাসায় ফেরে নি। রাতে আমি তার জন্যে অনেকক্ষন অপেক্ষা করে পরে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমানোর আগে দরজা আড়াআড়ি করে রেখে দিয়েছি। সকাল ঘুম থেকে উঠে দেখি দরজা আগের মতোই আছে, তার খাটের দিকে তাকিয়ে দেখি সে নাই’। চুপচাপ কথা গুলো শুনার পর শুকু মিয়ার বলার মতো কিছু রইলো না।  


‘তুই বাড়ি, যা আমি দেখছি’ বলে গেট লাগিয়ে ভেতরে চলে আসে শুকু মিয়া। কাসেম আশা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। তারপর ছেলের খোঁজে বের হবে।  

আজ থেকে একমাস অবদি ছেলের খোঁজ করে গেছে শুকু। আখের কোন ফল হয় নি। ক্ষত মনে ব্যাপারটা প্রথম দিকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে নি। সময়ের সাথে সাথে মনের ঘাঁ শুকিয়ে যায়। আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিকও হয়ে যায়। তারপর, তারপর শুকুর মনে আবার ঘাঁ শুরু হয়। যে ঘাঁ কখনো শুকাবার না।


বিকালে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে শুকু। সারারাত কাজ শেষে দিনে শুকু মিয়ার ঘুম ছাড়া কোন কাজ থাকে না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুমায় সে। ঘুম থেকে উঠে গোসল, খাওয়া দাওয়া ছাড়াও নিজের বৌকে টুকটাক গৃহের কাজে সাহায্য করে, আগে ছেলে থাকতে ছেলে এসব করতো। তারপর বিকেলে বাজারে আসে। সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা দেয়। আড্ডা শেষে কর্মস্থলে ফিরে যায়। নিয়ম মাফিক আজকেও তাই হচ্ছে। 

হুট করে একটা ছোট ছেলে এসে বলে গেলো ‘কাকু’ তাকে তলব করছে এক্ষুনি দোকানে যাওয়ার জন্যে। 

হামিদ সাহেব- হলেন অত্র এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তি। আগে সরকারী চাকুরী করতেন এখন বাজারে বড় রঙের দোকান উনার। এখানকার সবাই উনাকে কাকু নামেই ডাকেন। শুকু মিয়ার চেয়ে বয়সে কয়েক বছরের বড় হামিদ সাহেব। তার সাথে শুকু মিয়ার খুবই ভাব। শুকু মিয়া তার কাছে মাঝে মাঝে পরামর্শের জন্যেও যায়। তার ছেলের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে অন্য সবার মতো হামিদ সাহেবও তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে। 

শুকু দোকানে যাওয়ার সাথে সাথে হামিদ সাহেব পত্রিকা থেকে নিজে চোখ সরিয়ে তাকে একটা ছবি দেখতে দেয়। লেখা পড়া জানে না শুকু। পত্রিকায় ছবি দেখে তার বুকে ধুক ধুক শুরু হয়ে যায়। পত্রিকায় থাকা পাঁচ জন মানুষের মধ্যে একজন তার পরিচিত। লোকটির সাথে তার দেখা হয় একমাস আগে কবর স্থানে। রাতের অন্ধকারে যার সাথে সাহায্য করা নিয়ে এতো কথা তাকে তো কখনো ভুলার নয়। 

শুকু মিয়া ছবির যে মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে আঙুল দেখিয়ে হামিদ সাহেব বলেন, ‘তোমার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন বিকেলে এই ছেলেকে আমি দেখেছি। রাসেলের সাথে কি নিয়ে তার কথা কাটাকাটি হয়। এরপর হাতাহাতি। আমার দোকানের ছেলেরা গিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে দেয়। নাহলে তখন অনেক ঝামেলা হতো। সম্ভবত এই ছেলের নাম ‘লোকমান’। পত্রিকায় তো তাই লিখেছে। তোমাকে আমি ডেকেছি ছেলেটিকে চেনো কিনা তা জানার জন্যে। 

‘না’ শুকু মিয়া মুখ দিয়ে স্রেফ জানিয়ে দেয়। 

‘পত্রিকায় কলাম পড়ে ছেলেটিকে খুব বেশী অসুবিধারই মনে হচ্ছে। ও খুব জঘন্য সব কাজের সাথে জড়িত। যাইহোক এ জন্যেই তোমাকে ডেকেছি। আচ্ছা তুমি আড্ডা দিতেছিলে যাও আড্ডা দাও পড়ে আবার কথা হবে, এই বলে ভদ্রলোক আবার পত্রিকা মগ্নতা নিয়ে পড়া শুরু করলেন। 

শুকু মিয়া রাস্তায় হাটছে। দোকান থেকে বের হওয়ার পর থেকে তার মনে নানা রকম প্রশ্নরা উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। তার মনে বার বার ই একই কথা আসছে। পত্রিকায় দেখা লোকমান ছেলেটি সেই তাহলে তার ছেলে রাসেল কে... এই টুকু ভাবার পর আর ভাবতে পারছে না শুকু মিয়া। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। খুবই পানির তৃষ্ণা পাচ্ছে। তার চোখে মুখে অন্ধকার ঠেকছে সব কিছু। নিজের ছেলেকে নিজেই... এই টুকু ভেবেই আর নিতে পারছে না। হাটতে হাটতে শুকু মিয়া রাস্তায় পড়ে যায়। 

ইতি

ছোট গল্পঃ বিচার
 লেখকঃ মাহতাব হোসেন 

Saturday, 1 April 2017

প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ

বই মেলা ২০১৭ এর শুরু থেকে আজ অবদি অনলাইন এবং অফলাইনে যে বইটির নাম আমাদের অত্র এরিয়ার শুনা
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইয়ের কাভার
যাচ্ছে, তার নাম “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ”। বইটির স্রষ্টার নাম আরিফ আজাদ। এটি তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই। 

“প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ” বইটি মূলত আস্তিকবাদ আর নাস্তিকবাদ নিয়ে। আস্তিকতা আর নাস্তিকতার মাঝে যে ব্যাপারটা যুক্ত রয়েছে তা হচ্ছে বিজ্ঞান। মুক্তমনারা বিজ্ঞানসমত্ত এই অর্থে তারা নিজেদেরকে দাবী করেন। তারা বিজ্ঞানের আলোকেই কথা বলতে বা চলতে পছন্দ করেন। অথচ বিজ্ঞান নিজেও পরিবর্তনশীল তখন কি মুক্তমনারা তাদের নিজেদের মনের পরিবর্তন ঘটান, বিজ্ঞানে এমন অনেক ঘটনাই রয়েছে যা আজকে সত্য হলেও আবার কয়েক যুগ পরে নতুন সত্য এসে পুরাতন সত্যকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বইটিতে এমন সব ঘটনার বর্ননা রয়েছে যা আপনাকে বস্তুত উক্ত ব্যাপার গুলো সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারণা দিবে।

প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইটি অনেক ইনফর্মেটিভ। ধর্ম আর অস্তিত্ববাধ’র বাহিরেও এখানে বিজ্ঞানের অনেক ব্যাপারে তথ্য এবং ব্যাখ্যা রয়েছে। বইটি যদি ‘আস্তিকবাদ আর নাস্তিকবাদ’ এই খাতিরে পড়তে ইচ্ছে না জাগে, তাহলে ইনফর্মেশন জানার জন্যে হলেও বইটা পড়া উচিৎ বলে মনে করি।


গল্পের শুরুতে আমরা দেখতে পাই সাজিদ নামের ছেলেটি নাস্তিক থাকে। আস্তিকবাদের উপর আস্থা হারিয়ে কিছুকাল আগে সে নাস্তিকতায় যোগ দেয়। অল্প সময়ের ব্যবধানে নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার সে তাঁর স্রষ্টার ধর্মে ফিরে যায়। এই অল্প সময়ের ট্রানজিটটা তাঁর ধর্মের ভিতটা আরো মজবুত করে। যারা নিজেদেরকে মুক্তমনা বলে দাবী তোলে তাদের মন আসলে কতোটা মুক্ত সে সম্পর্কেও সাজিদের ক্লিয়ার ধারণা তৈরি হয়। পরবর্তিতে বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাথে বিভিন্ন নাস্তিকের যুক্তির খেলা চলে। তাদের প্রতিটা টপিকই থাকে এমন যে, সাজিদকে তা যুক্তি দিয়ে ভেঙ্গে দেখাতে হবে ধর্মের এঙ্গেল থেকে। এভাবেই আস্তিকবাদ আর নাস্তিকবাদের খেলা চলে পুরো বই জুড়ে। যুক্তির খাতিরে ধর্ম, বিজ্ঞান, ইতিহাস কোনটাই বাদ যায় নি। 


 বইটিতে এমন সব মজার এবং গুরুত্বপূর্ন তথ্য রয়েছে যা আপনার অস্তিত্বের দ্বিধাবোধের জায়গা গুলো থেকে আপনাকে অব্যাহতি দিবে। বইয়ের শেষ পর্যায়ে এসে দেখা যায়- Antony flew নামে একজন নাস্তিক ছিলেন। যাকে নাস্তিকদের ভাবগুরু হিসেবে মাণ্য করা হয়। নাস্তিকতার উপর উনি প্রচুর বই লিখেছেন, অনেক যুক্তি ও তর্ক করেছেন। তার লেখার উপর ভর করেই অনেকে নাস্তিকতার পক্ষে কথা বলতেন। কিন্তু ২০০৪ সালে এই নাস্তিকদের গুরুতুল্য এই লোক হুট করেই আস্তিক হয়ে যান। আস্তিক হওয়ার যে কয়েকটি মেজর কারন বা প্রমাণ তিনি উল্লেখ্য করেছেন তার মধ্যে একটি হলো ডিএনএ-এর মধ্যে অপূর্ব তথ্য।

লেখক আরিফ আজাদ তাঁর প্রথম বই হিসেবে যথেষ্ট মুনশিয়ানা দেখিয়েছে লেখায়। এই বইটি লেখার জন্যে তাকে প্রচুর গবেষণা করতে হয়েছে। এই দিক থেকে লেখক সার্থকও বটে। বইটি পড়ার পর যে কেউ বুঝতে সক্ষম হবে; লেখক বিভিন্ন ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। বিশেষ করে, ধর্ম আর বিজ্ঞান সম্পর্কিত ব্যাপারে।

প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ লেখক : আরিফ আজাদপ্রকাশনী : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্সবিষয় : অন্ধকার থেকে আলোতে। লেখাঃ মাহতাব হোসেন